শান্তি-শৃঙ্খলা নষ্ট হয় এমন কাজ করা থেকে দয়া করে বিরত থাকুনঃ এমপি মাশরাফী

প্রকাশিত: ৯:২৬ পিএম, জুলাই ১৬, ২০২২
  • শেয়ার করুন

ধর্মীয় অবমাননামূলক মন্তব্যের অভিযোগে নড়াইলের লোহাগড়া থানার দিঘলিয়া গ্রামে সাম্প্রদায়িক হামলার নিন্দা জানিয়ে ফেসবুকে পোস্ট করেছেন বাংলাদেশ জাতীয় দলের সাবেক অধিনায়ক ও সংসদ সদস্য (এমপি) মাশরাফী বিন মুর্তজা। নিজের ভেরিফায়েড অ্যাকাউন্টে শনিবার দুপুরে দেয়া পোস্টে তিনি সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বিনষ্টকারীদের ফাঁদে পা না দিতে নড়াইলবাসীর প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন।

মাশরাফীর স্ট্যাটাসটি পাঠকদের জন্য হুবহু তুলে ধরা হলো।

সম্মানিত এলাকাবাসী,
গতকাল আমাদের এলাকায় এমন একটি ঘটনা ঘটেছে যা আমাকে ভীষণভাবে মর্মাহত করেছে এবং প্রতিটি মুহূর্তে পোড়াচ্ছে। সবাইকে বিশেষভাবে অনুরোধ করছি এলাকার শান্তি-শৃঙ্খলা নষ্ট হয় এমন কাজ করা থেকে দয়া করে বিরত থাকুন।

সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বিনষ্টকারীদের ফাঁদে পড়ে নড়াইলের হাজার বছরের ঐতিহ্য আর সম্প্রীতির বন্ধনকে এক নিমিষে ম্লান করে দেবেন না। ছেলেবেলা থেকে যে নড়াইলকে দেখে এসেছি, যে নড়াইলকে নিয়ে আমরা গর্ব করি, সেই নড়াইলের সঙ্গে এই নড়াইলকে আমি মেলাতে পারছি না।

ইসলাম শান্তির ধর্ম। আজীবন শান্তি ও সম্প্রীতির দূত ছিলেন আমাদের প্রিয় নবী হযরত মুহাম্মদ (সা.)। অজ্ঞতা থেকে হোক কিংবা উদ্দেশ্য প্রণোদিতভাবে কেউ যদি মহানবী (সা.) কে নিয়ে কটূক্তি করে থাকে তাহলে তার বিরুদ্ধে প্রশাসন আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা গ্রহণ করবে। কেউ যদি সত্যিই এমনটি করে থাকে অভিযোগ প্রমাণিত হলে অবশ্যই তার বিচার হবে।

দেশের আইন আছে, প্রশাসন আছে তারা ব্যবস্থা নেবেন। কোনো পরিস্থিতিতেই আমরা আইন নিজের হাতে তুলে নিতে পারি না। অভিযোগ যদি সত্যিও হয় একজনের জন্য গোটা সমাজের নিরপরাধ মানুষদের ওপর অন্যায় করার কোনো অধিকার কারো নেই। কেউ সত্যি অপরাধ করলে তার বিচার আদালত করবে, তবে আমি-আপনি এজন্য কাউকে কোনো শাস্তি দিতে পারি না।

দয়া করে আপনারা শান্তি বজায় রাখুন। উত্তেজিত না হয়ে একটু ভাবুন। ষড়যন্ত্রকারীদের ফাঁদে পা দিয়ে একের পর এক এমন ঘটনা ঘটিয়ে হাজার বছরের সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির আমার নড়াইলকে এমন কলঙ্কিত করবেন না।

ঘটনা শোনামাত্র আমি স্থানীয় পুলিশ ও প্রশাসনকে বলেছি, যত দ্রুত সম্ভব ব্যবস্থা নিতে। তাৎক্ষণিক নড়াইলের পুলিশ সুপার, ডিআইজি মহোদয়, এমনকি স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গেও কথা বলেছি যেন দ্রুত ব্যবস্থা নেয়া হয়। পাশাপাশি আমার স্থানীয় নেতাকর্মীদেরও ঘটনাস্থলে দ্রুত পাঠিয়েছি তারা যেন অসহায় মানুষগুলোর পাশে দাঁড়ায়। খুলনা থেকে র‌্যাব পাঠানো হয়েছে। এত কিছুর পরও ভীষণ দুঃখজনক কিছু ঘটনা ঘটে গেছে। থামানোর চেষ্টা করতে গিয়ে স্থানীয় বেশ ক’জন নেতাকর্মী আঘাত পেয়েছেন। তবে অসহায় মানুষের আর্তনাদের কাছে সেটা কিছুই নয়। একজন সাধারণ মানুষও আক্রান্ত হলে সেই ক্ষতি অপূরণীয়। যারা আক্রান্ত হয়েছেন, তাদের জন্য আমার মন কাঁদছে।

ঘটনার সময় শান্তি বজায় রাখার চেষ্টা করে গেছি ঘটনার পর আক্রান্তদের সঙ্গে কথা বলেছি। তাদেরকে সব ধরনের সাহায্য-সহযোগিতা থেকে শুরু করে মানসিকভাবেও পাশে থাকব বলে কথা দিয়েছি। তাতে অবশ্যই ক্ষতিপূরণ হবে না। তবে আপনাদেরকে বলছি, আমরা আপনাদের পাশে সর্বোতভাবে আছি। আপনারা স্বাভাবিক জীবনযাপন করুন। এই দেশ, এই মাটি, এই আলো-বাতাস, আপনার-আমার সবার।