মাটি ও মানুষের নেতা এমপি একরামুল করিম

প্রকাশিত: ১০:১৩ এএম, জুলাই ৩, ২০২০
  • শেয়ার করুন

প্রাণঘাতী করোনা ভাইরাস (কোভিড-১৯) সারা বিশ্বে এখন এক আতঙ্কের নাম। বিশ্বের প্রায় প্রতিটি দেশেই হানা দিয়েছে এ ভাইরাস। এর সংক্রমণ থামাতে প্রায় সব দেশই কোনো না কোনোভাবে লকডাউনের পথে হাঁটলেও পরিকল্পিতভাবে এর তাণ্ডব থামাতে পেরেছে খুব কম দেশই।

বাংলাদেশে এ ভাইরাস শনাক্ত হয় গত ৮ মার্চ। ২৬ মার্চ থেকে দেশে সাধারণ ছুটি ঘোষণা করে লকডাউন পরিস্থিতি সৃষ্টি করা হয়। ফলে কর্মহীন হয়ে পড়ে লাখ লাখ মানুষ। এরইমধ্যে হাজার হাজার মানুষের চাকরি চলে গেছে। মধ্য ও নিম্নবিত্তের ঘরে ঘরে চলছে আর্থিক সংকট।

ঠিক এমন সময় দেশের বহু বিত্তবান হাত গুটিয়ে বসে থাকলেও কিছু মানুষ তাদের সহযোগিতার হাত খোলা রেখেছেন ঠিকই। তাদের উদ্দেশ্য আত্মপ্রচার নয়। তারা মানবতার সেবায় নীরবে নিভৃতে সাধারণ মানুষদের সহযোগিতা করে যাচ্ছেন প্রতিনিয়ত। এই মানবতার ফেরিওয়ালাদের একজন হলেন নোয়াখালীর ‘মাটি ও মানুষের নেতা’ বলে খ্যাত এমপি একরাম।

নোয়াখালী-৪ (সদর-সুবর্ণচর) আসনের সংসদ সদস্য, জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য এমরামুল করিম চৌধুরী দেশে করোনা সংক্রমণের প্রথম দিকে গত ২৩ মার্চ নিজের ব্যক্তিগত ফেসবুক পেজে একটি পোস্ট দেন। এমপি একরামুল করিম

ওই পোস্টে তিনি বলেন, ‘মিনিমাম ১২ কোটি মানুষ বিভিন্ন সিম ব্যবহার করে। প্রত্যেকটা সিম থেকে গড়ে ৫ টাকা করে কেটে নিন। ৬০ কোটি টাকা দিয়ে মিনিমাম ৪০০টা আইসিইউ (নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্র) খোলা যাবে। সারা দেশের প্রত্যেকটা ব্রিজের ৫ দিনের টোল ভাড়া এক সঙ্গে করেন। সেইসব টাকা দিয়ে মাস্ক, স্যানিটাইজার বিতরণ করেন। যতগুলো নেতা আছে তাদের লিস্ট করে তাদের থেকে ৫ লাখ টাকা করে নেন। সেইগুলো দিয়ে দেশ লকডাউন করে যারা খেতে পারবে না তাদের খাবার পৌঁছায় দেন। এই রকম হাজারো সমীকরণ আছে। আর সবাই দিতে প্রস্তুত। দ্রুত সিদ্ধান্ত নেন। একটা জরুরি সিদ্ধান্তই অনেক মানুষকে বাঁচিয়ে দেবে। বাংলাদেশটা মানচিত্রে থাকবে।’

তিন মাস আগেই তিনি বিশ্ব পরিস্থিতির আলোকে বুঝতে পেরেছিলেন, কী ঘটতে যাচ্ছে প্রিয় বাংলাদেশে। তাই তো নিজের ফেসবুক পেজে মানবতার সেবায় সম্মিলিতভাবে কাজ করার জন্য যার যার অবস্থান থেকে সবাইকে এগিয়ে আসার ডাক দিয়েছিলেন এমপি একরাম।

সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে একটি পোস্ট দিয়েই তিনি তার দায়িত্ব শেষ করেননি। করোনা সংক্রমণের শুরু থেকেই প্রতিদিন নতুন উদ্যোগ আর নতুন চিন্তা ভাবনায় সরকারের পাশাপাশি ব্যক্তিগত উদ্যোগে নোয়াখালীর জনগণের পাশে ছিলেন এই নেতা। মহামারি করোনা পরিস্থিতির শুরুতে মানুষকে খাদ্য সহায়তা দিতে এমপি একরাম ব্যক্তিগত তহবিল থেকে স্থানীয় জেলা প্রশাসককে (ডিসি) ৫০ লাখ টাকা দেন। পাশাপাশি নোয়াখালীর ৬০-৭০ হাজার পরিবারের মধ্যে নিজ কর্মী বাহিনী দিয়ে খাদ্যসামগ্রী বিতরণ করেন।

এরপর দিন যায়, কিন্তু নোয়াখালীতে করোনার প্রকোপ বাড়তে থাকে। এতে দিশেহারা হয়ে পড়েন এমপি একরাম। নিজ এলাকার মানুষ যাতে না খেয়ে না থাকে সেই জন্য গঠন করেন ‘একরামুল করিম চৌধুরী ফাউন্ডেশন’। সেখানে দ্বিতীয় দফায় হতদরিদ্রদের খাদ্য সহায়তা, স্বাস্থ্য সুরক্ষার সরঞ্জাম বাবদ দেন আরও ৩৮ লাখ টাকা।

একরাম চৌধুরী ফাউন্ডেশনের পক্ষ থেকে গঠন করেন ‘ইমার্জেন্সি ফুড ক্রাইসিস রেসপন্স টিম’। এরপর নোয়াখালীতে করোনা পরীক্ষা করার জন্য ল্যাব কার্যক্রম শুরু করা বাবদ দেন ৫ লাখ টাকার অনুদান। শুধু নিজ এলাকায় নয়, করোনায় মৃত্যুবরণকারী সম্মুখ যোদ্ধাদের পরিবারের প্রতিও সহায়তা নিয়ে এগিয়ে যান এমপি একরাম। করোনায় মৃত্যুবরণকারী প্রথম ডা. মহিনের পরিবারকে ২ লাখ টাকা দেন তিনি। পাশাপাশি মৃত ৫ সাংবাদিক ও ১৪ পুলিশ সদস্যের প্রত্যেক পরিবারকে ৫০ হাজার টাকা করে দেন তিনি।

এর আগে, জেলার কৃষিনির্ভর উপজেলা সুবর্ণচর উপজেলায় কৃষকদের ধান কাটার যন্ত্র ক্রয় ও ধান কাটা শ্রমিক বাবদ ১৪ লাখ টাকা এবং নোয়াখালী পৌরসভার হতদরিদ্রদের জন্য ১০ লাখ টাকা দেন এই জনপ্রতিনিধি। এছাড়া দুই দফায় স্থানীয় সাংবাদিকদের অনুপ্রেরণার জোগান দিতে ৪ লাখ টাকাসহ স্থানীয় অসুস্থ প্রবীণ এক সাংবাদিককে ৫০ হাজার টাকা দেন এমপি একরাম।

ঈদুল ফিতরের সময় নোয়াখালীর আড়াই হাজার অসচ্ছল ছাত্রলীগ কর্মী ও তাদের পরিবারের মধ্যে ঈদ শুভেচ্ছা বাবদ ২৫ লাখ টাকার উপহার সামগ্রী ও নগদ অর্থ দেন এমপি একরামুল করিম চৌধুরী ও তার একমাত্র ছেলে সাবাব চৌধুরী।

গত ৩ মাসে করোনা মোকাবিলা ও সাধারণ মানুষকে সচেতন করতে তিনি প্রতি সপ্তাহে জেলা প্রশাসক কার্যালয়ে ডিসি, এসপি, সিভিল সার্জনসহ সাংবাদিকদের নিয়ে বৈঠক করেন। দলীয় কার্যালয়ে স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের নিয়ে মিটিং করে তাদের ত্রাণ বিতরণ ও মানুষকে সচেতন করতে নানা দিক নির্দেশনা দেন। শুধু মিটিং বা নির্দেশনায় সীমাবদ্ধ ছিলেন না এমপি একরাম। তিনি সম্মুখ যোদ্ধার মতো জীবনের ঝুঁকি নিয়ে নিজেই নেমে পড়েন পথে-ঘাটে। এ পর্যন্ত জেলার মানুষকে সচেতন করে যাচ্ছেন তিনি।

প্রায় সময় নিজের ফেসবুক পেজে লাইভে এসে নেতা-কর্মীসহ সাধারণ মানুষকে করোনা রোধে নানা পরামর্শ দিচ্ছেন। আবার নেতা-কর্মীদের মৃত্যু শোকে হাহাকারও করছেন। একই সঙ্গে স্বাস্থ্য বিভাগের নানা অনিয়ম দুর্নীতির বিরুদ্ধে সরব প্রতিবাদ জানাচ্ছেন। এমপি একরামুল করিমকরোনাকালে মানবতার সেবায় নিজস্ব উদ্যোগে এমন দান-অনুদানের বিষয়ে একরামুল করিম চৌধুরী বলেন, করোনার শুরু থেকেই যা কিছু করেছি সবই রাষ্ট্রনায়ক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশনানুযায়ী করেছি। নেত্রীর নির্দেশ ছিল, অসহায় সাধারণ মানুষের পাশে থাকার। তাদের পাশেই আছি। সহযোগিতা করে যাচ্ছি।

তিনি বলেন, এই যে দানশীলতা। এটা আমার রক্তে মিশে আছে। এটা আমি উত্তরাধিকার সূত্রে প্রাপ্ত। আমার বাবা মুক্তিযোদ্ধা হাজী মোহাম্মদ ইদ্রিসকে দেখেছি, তিনি সব সময় সাধারণ মানুষের কথা চিন্তা করতেন, তাদের নানাভাবে সহযোগিতা করতেন। তাকে মানুষ দানবীরের উপাধিতে ভূষিত করেছেন। এখনও নোয়াখালী ও চট্টগ্রামের মানুষ তাকে দানবীর ইদ্রিস বলে স্মরণ করেন। আমি আমার বাবার সেই ধারা বহমান রেখেছি। আমৃত্যু রাখবো।

সবার কাছে দোয়া চেয়ে এমপি একরাম বলেন, এই ধারাবাহিকতা যেন এ দুর্যোগে অবশ্যই অব্যাহত রাখতে পারি। আর আমি বিশ্বাস করি, দেশের যে কোনো দুর্যোগ পরিস্থিতিতে বর্তমান সরকার ও আওয়ামী লীগ সাধারণ মানুষের পাশে আগেও ছিল, বর্তমানেও আছে এবং ভবিষ্যতেও থাকবে।