ভেন্টিলেটরে যাওয়া রোগীরা মারা যায়, ভেন্টিলেটরের কোনো প্রয়োজন নেইঃ স্বাস্থ্যমন্ত্রী

প্রকাশিত: ৬:৫৬ পিএম, জুন ৩০, ২০২০
  • শেয়ার করুন

স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক বলেছেন, করোনায় আক্রান্ত হয়ে ভেন্টিলেটরে যাওয়া রোগীদের প্রায় সবাই মারা গেছেন। তাই করোনা চিকিৎসায় ভেন্টিলেটরের কোনো প্রয়োজন নেই। দেশের ৪০০ ভেন্টিলেটরের মধ্যে সাড়ে তিনশ ব্যবহারই হয়নি বলেও দাবি করেন তিনি।

এছাড়া ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসকদের থাকা-খাওয়ায় কোনো দুর্নীতি হয়নি বলেও মন্ত্রী দাবি করেন।

মঙ্গলবার জাতীয় সংসদে আইন মন্ত্রণালয়ের মঞ্জুরি দাবির ওপর ছাটাই প্রস্তাব নিয়ে সংসদ সদস্যদের বক্তব্যের জবাব দিতে গিয়ে তিনি এসব কথা বলেন।

স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেন, ‘ঢাকা মেডিকেল কলেজের থাকা-খওয়ার বিষয় নিয়ে যে কথা হয়েছে আমি খোঁজ নিয়েছি। কাল রাতে আমি এটা দেখেছি। ৫০টি হোটেল ভাড়া হয়েছে। সেখানে তিন হাজার ৭০০ মানুষ এক মাস থেকেছে। প্রত্যেকটি রুমের ভাড়া এগারোশত টাকা। খাওয়ার খরচ যেটা বলা হয়েছে, তা টোলালি রং। সেখানে দিনের তিনটি মিলের জন্য খরচ ৫০০ টাকা হয়েছে।’

এর আগে ছাটাই প্রস্তাবের ওপর আলোচনাকালে জাতীয় পার্টি ও বিএনপির সংসদ সদস্য স্বাস্থ্যমন্ত্রীর কঠোর সমালোচনা করেন। গতকাল সোমবার সংসদে প্রধানমন্ত্রীও এ বিষয়ে মন্তব্য করেন। তিনি বলেন, ‘২০ কোটি টাকা অস্বাভাবিক মনে হচ্ছে। এটা আমরা পরীক্ষা করে দেখছি। এত অস্বাভাবিক কেন হবে? যদি কোনো অনিয়ম হয় আমরা ব্যবস্থা নেব।’

সংসদে দাঁড়িয়ে আজ স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেন, ‘আইসিইউ নিয়ে অনেক কথা হলো। ভেন্টিলেটর নিয়ে বিরাট হৈ-চৈ। কিন্তু দেখা গেছে, ভেন্টিলেটরের কোনো প্রয়োজনই নেই। ভেন্টিলেটরে যারা গেছেন তাদের প্রায় সকলেই মৃত্যুবরণ করেছেন। আমাদের চারশ ভেন্টিলেটর আছে। এর মধ্যে ৫০টিও ব্যবহার হয়নি। সাড়ে তিনশত ভেন্টিলেটর খালি পড়ে আছে। কারণ তখণ মানুষ এটা জানতো না।

করোনার চিকিৎসা ব্যবস্থা ওষুধ নিয়ে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা বারবার তাদের অবস্থান পরিবর্তন করেছে’ বলেও স্বাস্থ্যমন্ত্রী এ সময় দাবি করেন।

তিনি বলেন, ‘করোনার কী চিকিৎসা লাগবে ডব্লিউএইচও তা বারেবারে চেঞ্জ করেছে। আমাদেরও সাথে সাথে পরিবর্তন হয়েছে। কেউ কিন্তু আগে বলেনি, পিপিই লাগবে। যখন বলা হলো তখন সারা বিশ্ব লকডাউন। এই লকডাউনের কারণে আমরা পিপিই পাচ্ছিলাম না। যন্ত্রপাতি পাচ্ছিলাম না। পরে আস্তে আস্তে ব্যবস্থা করছি। এখন আর সেই অভিযোগ নেই। ইতোমধ্যে প্রায় ৩০ লাখ পিপিই সরবরাহ করা হয়েছে। এখন হাইফ্লো অক্সিজেনের প্রয়োজনের কথা বলা হচ্ছে। আমরা এক হাজার অক্সিজেনের অর্ডার দিয়েছি। প্রায় ১০ হাজার নতুন সিলিন্ডার বানানো হয়েছে। সরকার কাজ করেছে বলেই মৃত্যুর হার কম।’

স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক আরও বলেন, ‘সংসদ সদস্যরা সংসদে আমাদের কেবল দোষারোপ করে গেছেন। আমরা কী কাজ করেছি তা আসেনি তাদের বক্তব্যে। কোভিড আসার শুরু থেকেই আমরা কাজ করে যাচ্ছি। চীনে কোভিড দেখা দেয়ার পরপরই আমরা পোর্টগুলোতে স্ক্রিনিংসহ সব ধরনের ব্যবস্থা গ্রহণ করেছি। প্রত্যেক জেলা-উপজেলার হাসপাতালে কোভিডের জন্য আলাদা ব্যবস্থা করেছি। আমরা জাতীয়পর্যায়ে কমিটি তৈরি করেছি। ব্যবস্থা গ্রহণের ফলে আমাদের দেশে করোনায় মৃত্যুর হার ১ দশমিক ২৬ শতাংশ। এই হার ভারতে ৬ শতাংশ, যুক্তরাষ্ট্রে ১৫ শতাংশ, যুক্তরাজ্যে ১৪ শতাংশ। এটা এমনিতেই হয়নি। সকলে কাজ করেছে বলেই এটা হয়েছে।’

চিকিৎসক বেশি আক্রান্ত হওয়ার কারণ ব্যাখ্যা করে মন্ত্রী বলেন, ‘পিপিই কীভাবে পরতে হবে এবং খুলতে হবে, এই বিষয়টি জানা না থাকার কারণেই তারা আক্রান্ত হয়েছে। এজন্য আমরা তাদের প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করেছি। ফলে আক্রান্তের হার কমে গেছে।’

তিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রীর অনুমোদনক্রমে আমরা ইতোমধ্যে কোভিডের জন্যই শুধু দুই হাজার নতুন ডাক্তার নিয়োগ দিয়েছি। ছয় হাজার নার্স নিয়োগ দেয়া হয়েছে। আরও দুই হাজার চিকিৎসক নিয়োগের অনুমোদন দিয়েছেন। সেটা ১৫ দিনের মধ্যেই নিয়োগ হবে। হটলাইনে এক থেকে দুই লাখ মানুষ ফোন করে স্বাস্থ্য পরামর্শ নিচ্ছেন।

৮০ শতাংশ করোনা রোগীর লক্ষণ নেইঃ মন্ত্রী বলেন, ‘আমাদের মাত্র একটি টেস্টিং ল্যাব ছিল। দেড় মাসে আমরা এখন ৬৮টি ল্যাব করেছি। দিনে মাত্র দেড়শটা টেস্টের ব্যবস্থা ছিল, সেটা এখন ১৮ হাজারে উন্নীত হয়েছে। এটা এমনিতেই হয়নি। আমরা জানি আমাদের আরও টেস্ট দরকার। আরও করলে ভালো হয়। কিন্তু কোটি কোটি লোককে টেস্ট করতে পারবেন না। এটা আমাদের মানতে হবে।’

বেসরকারি হাসপাতাল বিলটা একটু বেশি করছেঃ ‘সরকারের উদ্যোগের ফলে বেসরকারি হাসপাতালগুলো করোনা চিকিৎসায় নিয়োজিত হয়েছে’ মন্তব্য করে জাহিদ মালেক বলেন, ‘বেসরকারি হাসপাতালগুলো করোনা চিকিৎসার উদ্যোগ নেইনি। আমরা তাদের নিয়ে এসেছি। এখন তারা কোভিড চিকিৎসা দিচ্ছে। তবে, এটা ঠিক তারা বিলটা একটু বেশি করছে। কোভিড চিকিৎসায় ব্যয় একটু বেশি। আমরা বলেছি, আমরা চার্জ ঠিক করে দেব। এই সময়ে আপনারা লাভের চিন্তা করবেন না। মানুষকে সেবা দিন।’

৪০ শতাংশ বেড খালি পড়ে আছেঃ রোগী সেবা পাচ্ছে না— এই অভিযোগ আর কোথাও নেই দাবি করে মন্ত্রী বলেন, ‘আমাদের মোট বেডের ৬০ শতাংশে এখন রোগী আছে। ৪০ শতাংশ বেড এখনও খালি পড়ে রয়েছে। প্রায় ১৪ হাজার বেড করোনা চিকিৎসার জন্য নির্ধারিত আছে। সেখানে রোগী আছে চার হাজার।

স্বাস্থ্যবিধি মানলে সংক্রমণ কমবেঃ মন্ত্রী বলেন, ‘বিশ্বের কোথাও করোনার চিকিৎসা ঠিক মতো নেই। টীকাও আবিষ্কার হয়নি। বিশ্বের অনেক দেশের তুলনায় আমাদের মৃত্যুর হার কম। তবে জীবন-জীবিকার বিষয় আছে। সেই কারণে আমাদের সংক্রমণের হার কিছুটা বেড়েছে। কিন্তু মৃত্যুর হার তুলনামূলকভাবে কম। মানুষ স্বাস্থ্যবিধি মেনে চললে, সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখলে এই সংক্রমণের হারও কমবে বলে আশা করি।’

আমাদের মধ্যে কোনো সমন্বয়হীনতা নেইঃ সংসদ সদস্যদের সমন্বয়হীনতার অভিযোগ অস্বীকার করে মন্ত্রী বলেন, ‘আমাদের মধ্যে কোনো সমন্বয়হীনতা নেই। পাঁচ মাস কিন্তু আমরাই মাঠে আছি। ২৫ দিনে বসুন্ধরায় দুই হাজার বেডের হাসপাতাল বানিয়েছি। আমরা চেষ্টা করে যাচ্ছি। সকলের সহযোগিতা পেলে কোভিড চলে যাবে। স্বাভাবিকভাবে অর্থনীতি এগিয়ে যাবে।

ঢাকা মেডিকেলের দুর্নীতির অভিযোগ টোল্যালি রংঃ ঢাকা মেডিকেলের করোনা সম্পর্কিত চিকিৎসকদের থাকা-খাওয়ার বিষয়ে যে দুর্নীতির অভিযোগ উঠেছে তা সঠিক নয় বলে দাবি করেন স্বাস্থ্যমন্ত্রী।