লঞ্চডুবির ঘটনায় তদন্ত সাপেক্ষে কঠোর শাস্তি নিশ্চিত করতে হবেঃ সাবেক নৌপরিবহন মন্ত্রী

প্রকাশিত: ৯:২৫ পিএম, জুন ২৯, ২০২০
  • শেয়ার করুন

সাবেক নৌপরিবহন মন্ত্রী শাজাহান খান বলেছেন, বুড়িগঙ্গায় লঞ্চডুবির যে ঘটনা ঘটেছে, তার ভিডিও দেখে বোঝা যাচ্ছে চালকের গাফিলতিতে দুর্ঘটনাটি ঘটে থাকতে পারে। এর দায় মালিক-চালক এড়াতে পারে না। তদন্ত সাপেক্ষে অবশ্যই তাদের কঠোর শাস্তি নিশ্চিত করতে হবে।

লঞ্চডুবির ঘটনায় প্রতিক্রিয়া জানাতে গিয়ে গণমাধ্যমের কাছে তিনি এ মন্তব্য করেন।

শোকার্ত পরিবারের প্রতি সমবেদনা জানিয়ে শাজাহান খান বলেন, দুর্ঘটনা যে কোনো সময় ঘটতে পারে। অনেক দুর্ঘটনা সাবধান থাকার পরেও ঘটে। কিন্তু বুড়িগঙ্গায় দিনের আলোতে যা ঘটলো, তা দুঃখজনক। পানির তীব্র স্রোত ছিল না। অতিরিক্ত যাত্রী ছিল, তাও বলা যাবে না। একটি লঞ্চ আরেকটি লঞ্চকে ধাক্কা দিয়ে ডুবিয়ে দিল। তবুও তদন্ত ছাড়া দোষী সাব্যস্ত করা ঠিক হবে না। তদন্ত সাপেক্ষে যেই অভিযুক্ত হবেন, তারই সাজা নিশ্চিত করতে হবে। কারণ চালকের গাফিলতি থাকতে পারে। আবার লঞ্চের নকশায় ভুল থাকতে পারে, যেখানে মালিক দায়ী। আমরা চাই, যেন একটি দুর্ঘটনার বিচার দিয়ে আর দশটি দুর্ঘটনা ঠেকানো যায়।

‘দুর্ঘটনার তদন্ত কমিটি হয় কিন্তু তদন্ত প্রতিবেদন প্রকাশ পায় না। প্রকাশ পেলেও সাজা হয় না। এমন অভিযোগ আপনার সময়েও ছিল’ এমন প্রশ্নে সাবেক এ মন্ত্রী বলেন, ‘এ অভিযোগ পুরোপুরি সঠিক নয়। ২০১৪ সালের পর আর কিন্তু বড় দুর্ঘটনা ঘটেনি। ওই সময় ভোলায় ভয়াবহ একটি লঞ্চডুবি হলো। বহু মানুষ মারা গেল। ঈদের দিন। আমি নামাজ পড়েই রওনা হলাম। তদন্ত হলো। লঞ্চটি ছিল সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়ার ছোট ছেলে আরাফাত রহমান কোকোর। নকশা যেমন অনুমোদন দেয়া হয়েছিল, সেভাবে বানানো হয়নি। একজন প্রধানমন্ত্রীর ছেলের লঞ্চ বলে কেউ প্রশ্ন তোলেনি। আমরা ব্যবস্থা নিলাম। নৌ-পুলিশ ছিল না। আমার সময় নৌ-পুলিশ নিয়োগ দেয়া হয়। সার্ভেয়ারের সংখ্যা বাড়ানো হয়। ম্যাজিস্ট্রেট একজনের জায়গায় চারজন নিয়োগ দেয়া হয়। বহু অভিযান চালানো হয়েছে। অভিযুক্ত হলে রুট পারমিট বাতিল বা জরিমানা করা হয়েছে। একবার তদন্ত প্রতিবেদন সাংবাদিকদের হাতেও দেয়া হয়েছিল। তারা কেন প্রকাশ করেননি আমার জানা নেই।’

‘রাজনীতির ছত্রচ্ছায়ায় দোষীরা ছাড় পেয়ে আসছে এ অভিযোগ তো পুরোনো’- এর জবাবে শ্রমিক নেতা শাজাহান খান বলেন, ‘দুর্ঘটনার প্রেক্ষিতে আমার সময়ে কিছু কার্যকর উদ্যোগ নেয়া হয়েছিল। কঠোরতা অবলম্বন করা হয়েছিল। ছয় বছরে বড় দুর্ঘটনা না হওয়ার এটিও একটি কারণ। আমি মনে করি সবার সচেতনতা জরুরি। প্রতিটি প্রাণ অমূল্য। আমি শ্রমিকের অধিকারের পক্ষে। তাই বলে কোনো চালকের অন্যায় মানতে পারি না। পরিবহন শ্রমিকের দোষের কারণে প্রাণ ঝরবে, তা হতে পারে না।’

উল্লেখ্য, সোমবার (২৯ জুন) সকাল ৯টার দিকে মুন্সিগঞ্জ থেকে ছেড়ে আসা দোতলা মর্নিং বার্ড লঞ্চটি সদরঘাট কাঠপট্টি ঘাটে ভেড়ানোর আগ মুহূর্তে চাঁদপুরগামী ময়ূর-২ লঞ্চটি ধাক্কা দেয়। এতে সঙ্গে সঙ্গে মর্নিং বার্ড লঞ্চটি ডুবে যায়। লঞ্চডুবির ঘটনায় শেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত ৩২ জনের মরদেহ উদ্ধার করা হয়েছে। আহত একজনকে উদ্ধার করে চিকিৎসা দেয়া হয়েছে।

মৃতদের মধ্যে পুরুষ ১৯, নারী আটজন এবং তিনজন শিশু। বাকি দুজনের বিষয়ে এখনও জানা যায়নি।