প্রধানমন্ত্রীকে ‘হযরত’ উপাধি দেয়ার ব্যাখ্যা দিলেন হুইপ স্বপন

প্রকাশিত: ৮:৩৫ পিএম, ফেব্রুয়ারি ৯, ২০২০
  • শেয়ার করুন

জাতীয় সংসদে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে ‘হযরত’ সম্বোধন করেছিলেন সংসদের হুইপ ও জয়পুরহাট-২ আসনের সাংসদ আবু সাঈদ আল মাহমুদ স্বপন।

গত সোমবার (৩ ফেব্রুয়ারি) রাতে ডেপুটি স্পিকার মো. ফজলে রাব্বী মিয়ার সভাপতিত্বে সংসদ অধিবেশনে রাষ্ট্রপতির ভাষণের ওপর আনিত ধন্যবাদ প্রস্তাবের আলোচনায় অংশ নিয়ে তিনি এ সম্বোধন করেন।

এর পর থেকেই সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে এ নিয়ে শুরু হয় ব্যাপক আলোচনা- সমালোচনা। প্রধানমন্ত্রীকে ‘হযরত’ সম্বোধন করা নিয়ে সমালোচনা নিয়ে নিজের বক্তব্যের স্বপক্ষে মত দিলেন হুইপ স্বপন। নিজের ফেসবুক পোস্টে ‘হযরত’ বলার ব্যাখ্যা দিয়েছেন তিনি।

এমপি নিউজের পাঠকদের জন্য পোস্টটি তুলে ধরা হলো:

‘আপনি যখন নামাজ পড়েন,

তাহলে মুসলমান হয়ে যান………

২০০৮ সালের জাতীয় নির্বাচনের প্রাক্কালে ডিসেম্বরের এক সন্ধ্যায় আমার এলাকার মোসলেমগঞ্জ বাজারে নির্বাচনী সভা শেষে মাগরিবের নামাজ আদায় করি।

নামাজ শেষে আমার পার্শ্বের মুরব্বীকে সালাম দিলে তিনি আমাকে প্রশ্ন করেন, আপনি নামাজ পড়েন?

আমি বলি, হ্যাঁ, তবে সব সময় পাড়ি না। পারতঃপক্ষে চেষ্টা করি।

তিনি আমাকে বলেন, আপনি যখন নামাজ পড়েন, তাহলে ওদিকে কেন? মুসলমান হয়ে যান।

আমি হতবাক হয়ে বলি, আমার নাম আবু সাঈদ আল মাহমুদ স্বপন, আমার পিতা একজন হাজি মানুষ। আমিতো মুসলমানই।

তিনি পুনরায় বলেন, আপনার বাবা যেহেতু হাজি মানুষ তাহলে আপনিও মুসলমান হয়ে যান।

আমি বলি, আমি মুসলমান না হলে নামাজ পড়লাম কেন?

তিনি বলেন, আপনি নৌকার প্রার্থী না?

আমি বলি, হ্যাঁ।

তিনি বলেন, তাহলে আপনি কেমনে মুসলমান? নৌকা তো মুসলমানের মার্কা নয়। মুসলমান কেমনে নৌকা করে?

আমি আর কথা বাড়াইনি। নির্বাচনের সময় প্রতিটি মুহূর্ত মূল্যবান। আমি অর্বাচীন ‘ভদ্রলোকের’ সঙ্গে তর্কে জড়িয়ে সময় নষ্ট না করে নীরবে অপমান সয়েছি। আল্লাহর কাছে প্রার্থনা করেছি, রাব্বুল আ’লামীন এই অর্বাচীনকে হেদায়েত দান করুন।

গত মেয়াদে পাঁচ বছর এমপি ছিলাম। সরকার এমপিদের মাধ্যমে কিছু টিআর, কাবিখা প্রদান করে। এমপিরা পছন্দমতো প্রতিষ্ঠানকে দান করতে পারেন অথবা ছোটখাট কাজ করাতে পারেন। আমি ৫ বছরে টিআরের এক ছটাক খাদ্যশস্য বা টাকা কোনো ক্লাবে বা সমিতিতে দেইনি, কোথাও টিভি কিনেও দেইনি। জনসংখ্যার অনুপাত অনুযায়ী টিআর শুধুমাত্র মসজিদ, ঈদগাহ মাঠ এবং মন্দিরে প্রদান করেছি। এক প্রতিষ্ঠানে মোটা বরাদ্দ দিতে পারিনি, কিন্তু প্রতি প্রতিষ্ঠানে এক টন করে পৌঁছানোর ব্যবস্থা করেছি। কারণ সকল মসজিদই আল্লাহ ঘর, সব মসজিদের প্রতি আমার দায়িত্ব আছে। বিনিময়ে নিজে এক টাকা কমিশন নেইনি, আমার সহকর্মীদেরও নিতে দিইনি। এমনকি কোনো প্রতিষ্ঠানের নেতৃবৃন্দকে আমার কাছে এসে ধর্ণা দিতে হয়নি। টাকা খরচ করে দরখাস্ত পৌঁছাতেও নিষেধ করেছি। আমি নিজ দায়িত্বে পৌছানোর ব্যবস্থা করেছি।

(ভুলক্রমে দুই একটি বাদে) প্রতি মসজিদ ও ঈদগাহ মাঠে টিআর পৌঁছানোর ফলে আমার এলাকার মুমিন মুসলমানগণ বেশ খুশি ছিলেন। সবাই এ কাজের প্রশংসা করেন। কারণ অতীতে ইসলামের কথা বলে ভোট গ্রহণকারী ‘ঈমানদার’ জনপ্রতিনিধিদের আমলে বিনা কমিশনে মসজিদে বরাদ্দ প্রদানের কোনো সিস্টেম ছিল না।

গত নির্বাচনের সময়, আমি প্রতিনিয়ত ভোটের সার্ভে করাতাম। এবার অনেক সম্মানিত ভোটারবৃন্দ আমার প্রতি সন্তুষ্টি প্রকাশ করেছেন, আমার কাজের প্রশংসা করেছেন। ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান, আলেম-মুরব্বীদের প্রতি আমার সম্মান প্রদর্শনের কথা স্বীকার করেছেন। কিন্তু তাদের মধ্যে অনেকে আমার মার্কা নৌকা বিধায় আমাকে ভোট দিতে অপারগতা প্রকাশ করেছেন। কারণ তারা নৌকায় ভোট দিলে পরকাল হারাবেন। তারা আমার জন্য পরকাল হারাতে পারবেন না।

হয়ত বিশ্বাস হবে না, এই আমলেও মানুষ এই কথা বলে!!! যাদের বিশ্বাস হবে না, তাদের সঙ্গে আসলে তৃণমূলের মানুষের কোনো যোগাযোগ নেই।

১০ বছরের ব্যবধানে দুটোই আমার ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতা। এমন অভিজ্ঞতা গ্রামের মানুষের সঙ্গে যোগাযোগ আছে এমন অনেকের আছে।

বহুদিন, বহুবার শুনেছি, ‘ইসলাম রক্ষার জন্য শেখ মুজিবকে হত্যা করা হয়েছে’। ‘তাকে হত্যা না করলে এদেশে ইসলাম থাকত না।’ ‘শেখ হাসিনা মুসলমান নয়।’ ‘শেখ হাসিনা হিন্দু। নাস্তিক, মুরতাদ।’

স্বাধীনতার মহানায়ক জাতির পিতা, তার কন্যা শেখ হাসিনা এবং আমরা তাদের অনুসারীরা খাঁটি দেশপ্রেমিক বাঙালি, অথচ আমরা নাকি ‘ভারতের দালাল’! হায় সেলুকাস!!

বৈরী পরিবেশে বিশ্ববিদ্যালয়ের হলে, এলাকায়, শহরে ‘রুশ ভারতের দালালেরা হুশিয়ার সাবধান’ গালি ও হুমকি খেতে খেতে আমার রাজনীতি বিকশিত হয়েছে। একজন খাঁটি দেশপ্রেমিক ছাত্র রাজনৈতিক কর্মী হয়েও অপর দেশের দালাল, দেশদ্রোহী গালি আমাকে বারবার আহত করেছে।

মুসলমান বা হিন্দু ধর্মের নাম। কোনো গালি নয়। কিন্তু একজন মুসলমানকে উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে হিন্দু বলা অথবা হিন্দুকে মালাউন বলা এক ধরনের গালি। একজন সম্মানিত মুক্তিযোদ্ধা বা একজন দেশপ্রেমিক রাজনৈতিক কর্মীকে ভারতের দালাল বলা এক ধরনের গালি। এমন গালি প্রতিদিন আমাদের দেওয়া হয়। অন্যদের গায়ে না লাগলেও আমার লাগে। শৈশব থেকে এর মোকাবিলা করে আসছি। কখনো দমিত হইনি। শির উন্নত করে অকুতোভয়ে সামনের পানে এগিয়ে চলেছি সকল অপপ্রচার, অপমানের যুক্তিযুক্ত সমূচিত জবাব দেবার প্রত্যয় নিয়ে।

সকল অপমানের, সকল মিথ্যাচারের, সকল অপবাদের জবাব দিয়েছি আমার সাম্প্রতিক ভাষণের একটি মাত্র শব্দ উচ্চারণের মাধ্যমে। আমি প্রধানমন্ত্রীকে নবী, রাসুল বা খলিফাদের সাথে তুলনা করিনি। তাকে মহামানবদের যোগ্য অনুসরণকারী বলেছি। নিঃসন্দেহে রাসুলুল্লাহকে (সাঃ) অনুসরণ করা সুন্নত। খোলাফায়ে রাশেদীনকে অনুসরণ করা উত্তম কাজ।

সঙ্গে সঙ্গে আমাদের হিন্দু বলা, নাস্তিক বলা, মুরতাদ বলা, কাফের বলা ব্যক্তিরা হই হই করে উঠলেন। যুক্তিতর্ক ছাড়া, আরবি শব্দের বাংলা বা অন্য ভাষায় তরজমার অর্থ না জেনে অথবা জেনেও আমাকে পূর্বের ন্যায় অমুসলিম, কাফের, মুরতাদ, শয়তান, মোনাফেক নানা শব্দে গালিগালাজ করে পৈশাচিক সুখ নিচ্ছেন।

অথচ এই ব্যক্তিরা বছরের পর বছর এদেশের অসংখ্য আলেম, পীর, মাশায়েক, দরবেশ, ইমাম, ইসলামী বক্তা, মাওলানা সাহেবদের নামের আগে হযরত শব্দটি বলে আসছেন। গ্রামে, গঞ্জে, শহরে আজও যেকোনো ইসলামী জলসার অতিথি ও বক্তাদের নামের আগে ‘হযরত’ শব্দটি ব্যবহার করা অসংখ্য পোস্টার দেওয়ালে লাগানো আছে, হ্যান্ডবিল মানুষের বাড়িতে বাড়িতে আছে।

‘হযরত’ শব্দটি শুধুমাত্র নবী, রাসুল, খলিফা, সাহাবা, তাবেঈন, তাবে-তাবেঈনদের নামের আগে ব্যবহার করা হয় না। শত শত বছর ধরে বুজুর্গ, আলেম, মুরব্বী, মমিন, পরহেজগারদের নামের আগে ‘হযরত’ শব্দটি ব্যবহার হয়ে আসছে। আরবে বাড়িতে কোনো মুরব্বী মেহমান আসলে তাকে সম্মান করে ‘হযরত’ বলে সম্বোধন করে স্বাগত জানানো হয়। একে অপরকে হযরত বলে সম্বোধন করেন। বাংলাদেশেও অনেক পরহেজগার আলেম অপর মেহমানকে ‘হযরত’ বলে সম্মানিত করেন। আমি নিজেও অনেক ইসলামী জলসায় একজন বক্তা অপর বক্তাকে ‘হযরত’ বলে সম্বোধন করতে দেখেছি।

‘হযরত’ শব্দের বাংলা অর্থ জনাব বা সম্মানিত। ‘হযরত’ অর্থ লর্ড বা প্রভু নয়। একজন মুসলমান আরেকজন মুসলমানকে ‘হযরত’ বলে ইজ্জত দিতেই পারেন। এই প্রথা ইসলামী বিশ্বের সর্বত্র চালু আছে। আমাদের দেশেও। এমনকি অনেক পিতা মাতা ইসলামের প্রতি সম্মান দিয়ে নিজের সন্তানের নাম ‘হযরত’ রাখেন। মহান আল্লাহর ৯৯ নামের সঙ্গে মিলিয়ে সন্তানের নাম রাখেন।

তাহলে এত গাত্র দাহ কেন ?

কারণ আমি বঙ্গবন্ধু কন্যার নামের আগে ‘হযরত’ ব্যবহার করেছি?

অন্য কোনো ব্যক্তির নামের আগে ব্যবহার করলে তারা ক্ষেপতেন না। কিন্তু আওয়ামী লীগ নেত্রীর আগে লাগানো যাবে না। ‘তিনি তো মুসলমানই না।’ অথচ তিনি তার শরীরে আওলিয়া পরিবারের রক্ত বহন করছেন। তিনি আওলাদে আউলিয়া।

পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ পড়েন, তাহাজ্জুদের নামাজ পড়েন, কোরআন তেলাওয়াত করেন, হজ করেছেন বহুবার, সংখ্যা ও অর্থের দিক থেকে বিশ্বে সর্বোচ্চ পরিমাণ মসজিদ নির্মাণ করছেন, গ্রাম পর্যন্ত ইসলামী শিক্ষা কেন্দ্র প্রবর্তন করি সহী কোরান শিক্ষার ব্যবস্থা করেছেন, বায়তুল মোকাররম জাতীয় মসজিদের উন্নয়ন করেছেন, ইসলামী-আরবি বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করেছেন, মাদ্রাসা শিক্ষার অভাবনীয় উন্নয়ন করছেন, আলেমদের রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতি, সম্মান ও সকল সরকারি চাকরিতে প্রবেশের সুযোগ করে দিয়েছেন।

সকল শিক্ষা ব্যবস্থায় ধর্মীয় শিক্ষাকে বাধ্যতামূলক করে তার ওপর গুরুত্ব আরোপ করে চলেছেন। সকল ইসলামী প্রতিষ্ঠান ও স্থাপনার নিরাপত্তা নিশ্চিত করেছেন। হজ ব্যবস্থাপনার অভূতপূর্ব উন্নয়ন করেছেন। ইসলামের কল্যাণে তার মহৎ কর্মের ফিরিস্তি লিখলে একটি গবেষণা গ্রন্থ রচিত হবে।

এরপরও তাকে এবং আওয়ামী লীগারদের মুসলমান মানতে তারা নারাজ। ইসলামের ইতিহাসে রাষ্ট্রনায়ক হিসেবে খোলাফায়ে রাশেদীনের পর যত শাসক, রাষ্ট্রনায়ক এসেছেন ইসলামের চিরন্তন শিক্ষা থেকে দীক্ষা নিয়ে সবচেয়ে বেশি ইসলাম ও মানবতার সেবা করার পরও তার নামের আগে ‘হযরত’ শব্দ ব্যবহার করে তার মহৎ কাজের জন্য তাকে সম্মান প্রদর্শন করে আমি মহাপাপ করে ফেলেছি! এই মুহূর্তে সমগ্র মুসলিম উম্মাহয় তিনিই মজলুম মুসলমানের পক্ষে সবচেয়ে সাহসী ও সরব রাষ্ট্রনায়ক।

তারা গালি দেওয়াতে আমি অসন্তুষ্ট নয়। কারণ তাদের গালাগালি প্রমাণ করে আমি তাদের আসল জায়গায় হাত দিয়েছি। যেহেতু আমি পেট্রিয়টিক ক্ষেপনাস্ত্র মেরেছি, স্কাড দিয়ে প্রতিঘাত আসবেই।

আমিই শতভাগ শুদ্ধ এমন অর্বাচীন দাবি আমি করি না। কিন্তু ইসলামের ব্যাখ্যা দিয়ে কেউ আমাকে বুঝিয়ে বলেননি যে, নবী, রাসুল, খলিফা ছাড়া কারো নামের আগে হযরত ব্যবহার করা অপরাধ বা গর্হিত কাজ।

যেহেতু আমি তাদের ভোটের মূল অস্ত্রে হাত দিয়েছি সেজন্য তারা তেলেবেগুণে জ্বলে উঠেছেন। তাদের মিথ্যার বেশাতি বন্ধ হতে চলেছে। আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে সবচেয়ে বড় অস্ত্রটি আমি অকেজো করতে চেয়েছি বলে তারা অগ্নিমূর্তি ধারণ করেছেন। তাদের বিরুদ্ধে আমার কোনো শব্দচয়ন নেই। আমি শুধু রাব্বুল আ’লামীনের নিকট ওদের জন্য প্রার্থনা করছি, হে রাব্বুল আ’লামীন, আপনি ওদের হেদায়েত করুন। আপনি ওদের চোখ খুলে দিন। ওরা জানুক যে, কোনো ঠান্ডা মাথার খুনী, কোনো বেপর্দা নারী, কোনো বিশ্বকুখ্যাত দুর্নীতিবাজ বা কোনো যুদ্ধাপরাধী-মানবতার শত্রু ইসলাম ও কোরানের রক্ষক নয়। কোরান ও ইসলামের রক্ষক স্বয়ং আপনি রহমানুর রাহীম।

পক্ষান্তরে, আমাদের পক্ষের কিছু মানসিকভাবে নাবালক আমার সমালোচনা করছেন যে, আমি নেত্রীর প্রতি তেলবাজি করছি, আমি অপরিপক্ক, এ কথা বলা ঠিক হয়নি ইত্যাদি, ইত্যাদি। বাবারা, চামচামি বা নেত্রীর প্রশংসা করার মতো অসংখ্য বিষয় ও উপাত্ত গিজগিজ করছে চারপাশে। এত বিষয় ও তথ্য থাকতে আমি এমন একটি স্পর্শকাতর বিষয় নিয়ে নিছক চামচামি কেন করতে যাব! নেত্রীর দৃষ্টি আকর্ষণের জন্য এই বিষয় কেন বেছে নেব? এতটা নির্বোধ আমি নই। এই আমি আত্মসমালোচনামূলক অনেক বক্তৃতা করেছি, ফেসবুকে লিখেছি। যার সাহস সমসাময়িককালে অনেকের নেই। নেত্রী আমাকে অজস্র দিয়েছেন। আমি এটি উপভোগও করতে পারি, আবার নেত্রী প্রদত্ত শক্তি, অবস্থান আমি দেশ, দল, সমাজ ও মানুষের কল্যাণে নিয়োজিত করতে পারি। আমি দ্বিতীয়টি বেছে নিয়েছি।

প্রতিপক্ষের রাজনীতির মর্মমূলে আঘাত হেনেছি। আমাদের বিরুদ্ধে সবচেয়ে বেশি ব্যবহৃত ও সবচেয়ে কার্যকর অস্ত্রটিতে আঘাত করেছি। নিজে সমালোচিত হওয়া, রাস্তাঘাট, মসজিদে অপমানিত হওয়া এমনকি অপঘাতে মৃত্যুর ঝুঁকি নিয়েও আমি প্যাট্রিয়টিক ক্ষেপণাস্ত্র হেনেছি।

৭৫ থেকে ২০১৯ – ৪৪ বছর ধরে পরহেজগার, ঈমানদার, মুমিন হওয়া সত্ত্বেও হিন্দু, মুরতাদ, নাস্তিক, কাফের, ভারতের দালাল বলে প্রদত্ত গালি আপনাদের গায়ে লাগতে না পারে, আমার লাগে।

ক্ষমতার উচ্ছিষ্ট কাউকে কাউকে অন্ধ বা আপোষকামী করে তুলতে পারে, সবাইকে নয়। প্রতিনিয়ত বরেন্দ্র অঞ্চলে আওয়ামী রাজনীতির মরুভূমিতে মালির দায়িত্ব পালনকারী স্বপন জীবন-মৃত্যুর সন্ধিক্ষণে দাঁড়িয়ে শির উচ্চ করে জয় বাংলার গান গায়। চারিদিকে বোমা, অগ্নিসন্ত্রাসের মাঝেও ছুটে চলা মানুষ আমি। সাইদীকে চাঁদে দেখা, নির্বাচন প্রতিহত করার সেই ভয়াবহ দিনগুলোতে আমার প্রোটোকল, প্রটেকশন ছিল না, হাতে অস্ত্র ছিল না। আর কখনো সন্তানের মুখ দেখতে পারব কি না সেই আশঙ্কা নিয়ে সন্তানের কপালে দীর্ঘ চুমু দিয়ে ঢাকা থেকে শুধু তিনটি টর্চ লাইট হাতে বেড়িয়ে রাজশাহী বিভাগে দৌঁড়িয়ে বেড়িয়েছি। আমি কর্মে বিশ্বাসী মানুষ। দোআঁশ মাটিতে ফুল ফোঁটানো মালি আর মরুভূমিতে ফুল ফোঁটানো মালির পরিশ্রম, কৌশল ও মনন এক রকম নয়।

তবুও আমি বিনয়ের সঙ্গে সকলের নিকট অনুরোধ করছি যদি কোনো আলেম, আল্লামা, মুফতি, মুহাদ্দিস অনূগ্রহপূর্বক আমাকে ইসলামী যুক্তি দিয়ে আমার বক্তব্যে ভুল ধরিয়ে দেন। আমি আমার অবস্থান পরিবর্তন করব। কিন্তু অযথা গালি দিয়ে, হুমকি দিয়ে দমন করার পাত্র আমি নই।

বিগত নির্বাচনের পূর্বে এই আমি সারা দেশের সম্মানিত ইমাম- মোয়াজ্জিনের জন্য মাসিক ভাতা চালুর প্রস্তাব আওয়ামী লীগের গুরুত্বপূর্ণ থিঙ্ক ট্যাঙ্কের নিকট জমা দিয়েছি। ইমাম সাহেবরা অনেক সম্মানিত ও সমাজগঠনে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখেন। কিন্তু গ্রামের ইমাম সাহেবরা কতটা কষ্টে দিনাতিপাত করেন সেই খবর কি আমাকে গালিগালাজকারীরা রাখেন! আজকের সক্ষম রাষ্ট্রে ইমাম- মোয়াজ্জিনগণ কেন রাষ্ট্রীয় আলোর বাইরে থাকবেন? আমার প্রস্তাব সক্রিয় বিবেচনায় রয়েছে। রাজনীতিবিদ হিসেবে শুধু আজ দেখলে চলবে না, রাজনীতিবিদকে ভবিষ্যত দেখতে হয়। আমি যে প্রস্তাব পেশ করেছি সেই প্রস্তাব বাস্তবায়নের ক্ষেত্র প্রস্তুত করার মানসিকতা নিয়েই আমি এই লাইনে ভাষণ দিয়েছি। আমি চাই, আমাদের সকল ইমাম- মোয়াজ্জিন রাষ্ট্রীয়ভাবে সম্মানী ভাতা পান এবং যতই বাঁধা আসুক, আমাকে যতই গালিগালাজ করা হোক আমার এই চিন্তা বাস্তবায়নে আমি অবিচল থাকব। আমি মুসলমান, আমি একবারই মরব, বারবার নয়।’