প্রশাসক নিয়োগের বিধান রেখে স্থানীয় সরকার আইনের সংশোধনী পাস

প্রকাশিত: ৬:১২ পিএম, মার্চ ৩১, ২০২২
  • শেয়ার করুন

স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠানগুলোতে প্রশাসক নিয়োগের বিরোধিতা করে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন একাধিক বিরোধী দলীয় সংসদ সদস্য এবং এই বিধানকে তারা বলেছেন অসাংবিধানিক।

আজ বৃহস্পতিবার বিএনপির সংসদ সদস্য হারুনুর রশীদের ওয়াক আউটের মধ্য দিয়ে জাতীয় সংসদে স্থানীয় সরকার (পৌরসভা) আইনের সংশোধনী পাস হয়।

মেয়াদোত্তীর্ণ পৌরসভায় সরকারি কর্মকর্তা বা উপযুক্ত ব্যক্তিকে প্রশাসক হিসেবে নিয়োগের বিধান রাখা হয়েছে পৌরসভা আইনের সংশোধনী পাস হয়েছে। এতে সরকারের দেওয়া নির্দেশ পালনে ব্যর্থ হলে পৌরসভার মেয়র ও কাউন্সিলরদের অপসারণের ক্ষমতা দেওয়া হয়েছে।

বিল পাসের আলোচনায় অংশ নিয়ে হারুন প্রশাসক নিয়োগের কারণ, সরকারের কোন কোন নির্দেশ পালন করতে হবে, এ বিষয়গুলোর স্পষ্ট ব্যাখ্যা দাবি করেন।

তিনি বলেন, এসবের ব্যাখ্যা না পেলে তিনি ওয়াক আউট করবেন। পরে বিলটি পাসের সময় তিনি সংসদ কক্ষ থেকে ওয়াক আউট করেন।

এর আগে বিল পাসের আলোচনায় বিএনপির হারুনুর রশীদ বলেন, ‘স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠানগুলো ক্যানসারে আক্রান্ত। স্থানীয় সরকারগুলোর একটি বিরাট অংশের প্রতিনিধি বিনাভোটে নির্বাচিত, বিরাট অংশ প্রশ্নবিদ্ধ নির্বাচনে নির্বাচিত। স্বাধীনতার ৫০ বছর পর মানুষ এমন স্থানীয় সরকার আশা করেনি। সংবিধানে সব পর্যায়ে নির্বাচিত জনপ্রতিনিধির কথা বলা আছে। নির্ধারিত সময়ে নির্বাচন করতে না পারলে সেজন্য সরকার দায়ী। প্রতিনিধিদের সরিয়ে দিয়ে সরকারদলীয় লোকদের বসানোর জন্য এই সংশোধন করা হচ্ছে।

তিনি এটাকে ‘বাকশালী পদ্ধতি’ চালুর চেষ্টা হিসেবে বর্ণনা করেন।

হারুন বলেন, ‘জেলা প্রশাসক ও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তারা এখন আওয়ামী লীগের দলীয় কর্মসূচি পালন করছেন। জনগণকে সেখানে অংশ নিতে বাধ্য করা হচ্ছে। ভিন্নমতের কেউ সেখানে না গেলে তাদের সরিয়ে দেওয়া হবে, এই উদ্দ্যেশে এই আইন করা হচ্ছে।’ এ ছাড়া সরকারের কোন কোন নির্দেশ পালন করতে হবে, তা আইনে স্পষ্ট করার দাবি জানান তিনি।

জাতীয় পার্টির সংসদ সদস্য পীর ফজলুর রহমান বলেন, ‘যেখানে নির্বাচিত প্রতিনিধি থাকার কথা সেখানে অনির্বাচিত কেউ বসতে পারবেন না। এটা সংবিধানের চেতনা। তত্ত্বাবধায়ক সরকার অনির্বাচিত বিধায় এটি বাদ দেওয়া হয়েছে। সেখানে কেন স্থানীয় সরকারে অনির্বাচিত ব্যক্তিকে বসানো হবে, এই প্রশ্ন রেখে তিনি বলেন, এটা সংবিধানের সঙ্গে সাংঘর্ষিক।’

জাতীয় পার্টির সংসদ সদস্য শামীম হায়দার পাটোয়ারী বলেন, ‘সংবিধানে বলা হয়েছে নির্বাচিত ব্যক্তিদের দ্বারা স্থানীয় সরকার পরিচালিত হবে। প্রশাসক নিয়োগের বিধান সংবিধানের সঙ্গে অসঙ্গতিপূর্ণ। নতুন পৌরসভা গঠনের পর প্রথমবার নির্বাচনের আগে একজন প্রশাসক নিয়োগ করা যেতে পারে, সেটা জরুরি প্রয়োজনে।’

বিরোধী দলের সদস্যদের বক্তব্যের জবাবে স্থানীয় সরকারমন্ত্রী তাজুল ইসলাম বলেন, ‘প্রশাসক নিয়োগের বিধান রাখার বিষয়টি যৌক্তিক। বিভিন্ন কারণে অনেক সময় নির্বাচন করা নিয়ে আইনগত জটিলতা তৈরি হয়। অনেকে এর সুযোগ নিয়ে থাকেন। বিভিন্ন কারণে রিট মামলা বা অন্য কোনো মামলা করে মেয়াদোত্তীর্ণ পরিষদ অনির্ধারিত সময়ের জন্য পৌর প্রশাসন পরিচালনা করে।’

সচিব পদটিকে পৌর নির্বাহী কর্মকর্তা নামাকরণের বিষয়ে মন্ত্রী বলেন, ‘মন্ত্রণালয়ে সচিব থাকেন। এই পদটি নিয়ে অনেক সময় সংশয় দেখা দেয়। কিছু ক্ষেত্রে এই পদের অপব্যাবহারও দেখা গেছে।
বিদ্যমান আইনেও পৌর এলাকা ঘোষণার পর পৌরসভা গঠন না হওয়া পর্যন্ত প্রশাসক রাখার বিধান আছে। এখন পৌরসভার মেয়াদ শেষে নতুন পরিষদ গঠন না হওয়া পর্যন্ত প্রশাসক নিয়োগের বিধান যুক্ত করা হয়েছে।’

তিনি আরও বলেন, ‘বিদ্যমান আইনে বলা আছে, পৌরসভা ঘোষণা করতে হলে জনসংখ্যার ঘনত্ব প্রতি বর্গ কিলোমিটারে গড়ে দেড় হাজার হতে হবে। সংশোধনে তা বাড়িয়ে ২ হাজার করা হয়েছে। বিলে পৌরসভার সচিবের পদের নাম বদলে ‘পৌর নির্বাহী কর্মকর্তা’ করা হয়েছে। বিলে পৌরসভার পরিষদ বাতিল সংক্রান্ত ধারায় নতুন বিধান যুক্ত করা হয়েছে। বলা হয়েছে, যুক্তিসঙ্গত কারণ ছাড়া কর্মকর্তা-কর্মচারীদের একাধিক্রমে ১২ মাস বেতন বকেয়া থাকলে পরিষদ বাতিল হবে।’

স্থানীয় সরকারমন্ত্রী তাজুল ইসলাম স্থানীয় সরকার (পৌরসভা) সংশোধন বিল-২০২২ সংসদে পাসের প্রস্তাব করেন। পরে তা কণ্ঠভোটে পাস হয়।