উপজেলা আ’লীগের সভাপতির পদে থাকতে পারবেন না সাংসদরা

প্রকাশিত: ৫:২৯ পিএম, নভেম্বর ১৮, ২০১৯
  • শেয়ার করুন

জেলা-উপজেলায় আওয়ামী লীগের রাজনীতির ত্রাণকর্তা স্থানীয় সাংসদরা। তারা সংসদীয় ক্ষমতার দাপটে কোথাও কোথাও তৈরি করেছেন আ.লীগ বনাম এমপি লীগ। তাদের এই সকল কর্মকাণ্ডের কারণে কোণঠাসা দলটির ত্যাগী ও পরিশ্রমী নেতাকর্মীরা। তবে চলতি তৃণমূলের সম্মেলনের মাধ্যমে স্থানীয় প্রভাবশালী এমপিদের বলয় ভেঙে দিচ্ছেন আওয়ামী লীগের সভানেত্রী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। সে জন্য দলটির দায়িত্বশীল নেতাদের নির্দেশনা দিয়েছেন তিনি।

আ.লীগ সূত্র জানায়, আগামী ২০-২১ ডিসেম্বর অনুষ্ঠিত হবে আওয়ামী লীগের ২১তম জাতীয় সম্মেলন। অনুষ্ঠেয় ওই সম্মেলনের অংশ হিসেবে আগামী ১০ ডিসেম্বরের মধ্য মেয়াদোত্তীর্ণ জেলা-উপজেলাসহ সকল ইউনিটের সম্মেলন করতে কেন্দ্রীয় ও তৃণমূল নেতাকর্মীদের নিদের্শনা দিয়েছেন আওয়ামী লীগের সভানেত্রী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। মূলত অনুষ্ঠেয় ওই সম্মেলনের মধ্যদিয়ে বিএনপি-জামায়াতসহ ভিন্নপন্থি রাজনৈতিক দলের নেতাদের দল থেকে ছেঁটে ফেলতে চান বঙ্গবন্ধুকন্যা। সে জন্য দায়িত্বশীল নেতাদের কঠোর হুঁশিয়ারি দিয়েছেন তিনি।

সভানেত্রীর এমন নির্দেশনা পাওয়ার পর তৃণমূলকে ঢেলে সাজাতে কাজ করছেন দলটির দায়িত্বশীল নেতারা। তাদের টার্গেট— যেকোনো মূল্য জাতীয় সম্মেলনের আগেই তৃণমূল সম্মেলন শেষ করতে। এদিকে তৃণমূল পর্যয়ের সম্মেলনকে সামনে রেখে স্থানীয় নেতাকর্মীদের বড় বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছেন আওয়ামী লীগের সংসদ সদস্যরা। কেউ কেউ বলয় ভারী করতে নিজ অনুসারীদের দায়িত্বশীল পদে বসাতে নানা তৎপরতা শুরু করেছেন। আবার কেউ কেউ সংসদীয় ক্ষমতার পাশাপাশি জেলা-উপজেলার শীর্ষপর্যায়ের পদ-পদবিতে আসতে জোর লবিং করছেন। স্থানীয় এমপিদের এমন আচরণে ক্ষুব্ধ দলটির তৃণমূল নেতাকর্মীরা।

শুধু তৃণমূল নয়, এমপি ও এমপিপন্থি নেতাদের রাজনীতির মাঠে এমন অবস্থানের কারণে ক্ষুব্ধ আওয়ামী লীগের সভানেত্রী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এ জন্য উপজেলা আওয়ামী লীগের সম্মেলনে শীর্ষ পদে স্থানীয় সাংসদদের না রাখতে দায়িত্বশীল নেতাদের নির্দেশনা দিয়েছেন বঙ্গবন্ধুকন্যা।

নেত্রীর এমন নির্দেশনা পাওয়ার পর ওই সকল এমপিদের সতর্ক করেছেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক, সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের। স্থানীয় এমপিদের উপজেলা সম্মেলনে প্রার্থী না হওয়ার আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, আওয়ামী লীগের সভানেত্রী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নিদের্শনা আছে— কোনো সংসদ সদস্য উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি বা সাধারণ সম্পাদক পদে প্রার্থী হতে পারবেন না। তবে যারা ইতোমধ্যেই হয়েছেন, সেগুলো আমরা খতিয়ে দেখছি। তিনি বলেন, যারা এমপি হতে পারেননি, তারা যেন নেতা হওয়ার সুযোগ পান। উপজেলা পর্যায়ে সভাপতি-সাধারণ সম্পাদক হতে পারবেন এমপিরা। কারণ কেন্দ্রের সঙ্গে তাদের সমন্বয় করতে হয়। আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা এ বিষয়ে নির্দেশ দিয়েছেন।

প্রায় প্রতিটি সাংগঠনিক জেলা শহরেই দলের মধ্যে অভ্যন্তরীণ কোন্দল-দ্বন্দ্ব অতীতের যেকোনো সময়ের চেয়ে বেশি। আর এই সকল অভ্যন্তরীণ কোন্দলের নৈপথ্যে রয়েছে ক্ষমতাসীন দলটির স্থানীয় সাংসদরা। মূলত তৃণমূলে অভ্যন্তরীণ কোন্দল প্রকাশ্যে রূপ নেয় গত পঞ্চম উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে। স্থানীয় সাংসদপন্থি নেতারা দলীয় মনোয়ন না পাওয়ায় ভোটের মাঠে নৌকার বিরুদ্ধে অবস্থান নেন তারা।

এমপিপন্থি নেতাদের হাতে মারপিটের শিকার হন নৌকার প্রার্থী ও সমর্থকরা। অনেকেই হামলা-মামলার শিকার হয়ে ঘরবাড়ি ছাড়া। ফলে রেকর্ড সংখ্যক উপজেলায় পরাজিত হয় নৌকা প্রতীক। যদিও ওই সময় নৌকাবিরোধী মন্ত্রী-এমপি ও প্রভাবশালী নেতাদের দ্বারা নির্যাতন-হয়রানির শিকার হওয়া সংক্রান্ত দুই হাজারেরও বেশি অভিযোগ দলের কেন্দ্রীয় পর্যায়ে করেছেন তৃণমূল নেতারা। কিন্তু নানা অভিযোগ থাকলেও নৌকাবিরোধী ওই সকল নেতাকর্মী ও এমপিদের ক্ষমা করে দিয়েছে আওয়ামী লীগের হাই-কমান্ড।

তবে তৃণমূল আওয়ামী লীগের রাজনীতিতে যারা নিবেদিতপ্রাণ বলে পরিচিত, দলের দুর্দিনে যারা ত্যাগের ভূমিকায় অবতীর্ণ হন, তৃণমূলের সেই ত্যাগী অনেক নেতার এখন দুর্দিন চলছে। শুধু নৌকাবিরোধী নয়, নিজ বলয় ভারী করতে ক্ষমতার দাপট দেখিয়ে বিভিন্ন সময় বিএনপি-জামায়াতপন্থি নেতাদের দলে অনুপ্রবেশের নৈপথ্যে স্থানীয় সাংসদরা।