আমলা নির্ভর প্রতিষ্ঠান না করে জনপ্রতিনিধিদের ক্ষমতায়নের পক্ষে সংসদ সদস্যরা

প্রকাশিত: ২:৩৫ পিএম, সেপ্টেম্বর ৮, ২০২০
  • শেয়ার করুন

রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (রাজউক), ঢাকা ওয়াসা, চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ, রাজশাহী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের মতো আমলা নির্ভর প্রতিষ্ঠানের কার্যক্রম ঘোর আপত্তি জানিয়েছেন নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিগণ। তাদের মতে আমলা নির্ভর এরকম প্রতিষ্ঠান না করে সিটি করপোরেশন, ইউনিয়ন পরিষদ, পৌরসভায় জনপ্রতিনিধিদের ক্ষমতায়ন করা হোক। তাতে জনগণের কল্যাণ বয়ে আনবে। কেউ কেউ বলেছেন, রাজউকের ইট পর্যন্ত টাকা চায়, বিল্ডিংয়ের বালু পর্যন্ত টাকা চায়, ওয়াসায় টাকা ছাড়া কাজ হয় না। সেখানে নতুন করে এ ধরনের প্রতিষ্ঠান গড়া আরও সমন্বয়হীনতা বাড়বে।

আজ মঙ্গলবার (৮ সেপ্টেম্বর) দুপুরে স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরীর সভাপতিত্বে সংসদ অধিবেশনে গাজীপুর উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ নামে একটি বিল পাসের আগে জনমত যাচাই-বাছাই কমিটিতে প্রেরণের প্রস্তাব উত্থাপন করে এসব কথা বলেন বিরোধী দল জাতীয় পার্টি ও বিএনপি দলীয় সংসদ সদস্যগণ। তারা সকলেই জনপ্রতিনিধিদের ক্ষমতা বাড়ানোর পক্ষে।

আলোচনায় অংশ নিয়ে কাজী ফিরোজ রশীদ বলেন, বিল তো পাস হবে, পাস হলে তাতে কি হবে? আমরা কি সুন্দর নগরী পাব? অথবা আধুনিক সুসজ্জিত, কিন্তু তা তো আমরা পাব না। বিল পাস হওয়ার পর দেখা যাবে যে যেভাবে পারে ইচ্ছামতো কাজ করছে। এখানে দেখার তো কেউ থাকবে না। আমরা শুধু দিয়েই যাচ্ছি, কিন্তু দেখার তো কেউ নাই। গাজীপুরের অন্তবর্তী যে ভাওয়াল গড় আছে যেখানে শালবন কেটে কেটে পর্যটন নগরী করা হচ্ছে দেখার তো কেউ নেই। এভাবে অপরিকল্পিতভাবে নগর উন্নয়নের নামে যা করা হবে তাতে সাধারণ নাগরিক সুবিধা পাবে না। রাজউক আছে, চট্টগ্রাম ও রাজশাহীতেও আছে সেখানে কিন্তু নগর উন্নয়নের নামে যা হচ্ছে তা ভালো নয়।

ফখরুল ইমাম বলেন, সংবিধানের ১১ অনুচ্ছেদে বলা আছে প্রশাসনিক সকল পর্যায়ে নির্বাচিত প্রতিনিধির মাধ্যমে জনগণের কল্যাণে কাজ করবে। গাজীপুর উন্নয়ন কর্তৃপক্ষে সেই সুযোগ নাই। এখানে একজন চেয়ারম্যান নিয়োগ করবেন। এর অভিজ্ঞতা তো ভালো না। তাই এটার দরকার আছে বলে মনে করি না।

মুজিবুল হক চুন্ন বলেন, এই আইনে কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান যিনি হবেন তিনি একজন আমলা অথবা নিয়োগপ্রাপ্ত একজন ব্যক্তি। নির্বাচিত প্রতিনিধি না। সিটি করপোরেশনের অভিজ্ঞতা থেকে দেখতে পাই বাংলাদেশের সিটি করপোরেশনের মেয়ররা অসহায়, কারণ তারা কাজ করতে পারেন না। দেখা যায় তারা রাস্তা করার পর সেখানে পানির লাইনের কাজ হচ্ছে নয়তো ড্রেন করছে, দেখা যায় বিদ্যুতের লাইন, গ্যাসের লাইন করছে সমন্বয়ের অভাব।

তিনি বলেন, রাজউকের দিকে তাকালে দেখা যায় যে রাজউকে গেলে বিল্ডিংয়ের ইট পর্যন্ত টাকা চায়। রাজউকের যে বালু সেটা পর্যন্ত টাকা চায়। ওয়াসাতে গেলে টাকা ছাড়া কাজ হয় না। যে রাজউকে ৯৬ সালে প্রকল্প নিয়েছিল পূর্বাচলে। যারা প্লট পেয়েছিলেন তারা মৃত্যু পথযাত্রী। তাদের ছেলে মেয়েরা বাড়ি করতে পারবেন কিনা জানি না। এই হল উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের অবস্থা। এখন গাজীপুর যদি একই উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ হয় রাজউকের তাতে লাভ কি? আওয়ামী লীগ সরকার গণতন্ত্রের প্রতি আস্থাশীল, আপনারা সিটি করপোরেশনের মেয়রদের ক্ষমতা জোরদার করে দায়িত্ব দেন।

পীর ফজলুর রহমান বলেন, এতদিন গাজীপুরের মূল উন্নয়ন কাজের দায়িত্ব ছিল সিটি করপোরেশনের। বিল পাস হওয়ার পর আর একটি প্রতিষ্ঠানের কর্তৃত্ব নিয়ে আসা হচ্ছে। সিটি করপোরেশন যে উন্নয়ন পরিকল্পনা নিচ্ছে সেই পরিকল্পনার সাথে এই কর্তৃপক্ষের অনেক ক্ষেত্রেই একটি সাংঘর্ষিক অবস্থা তৈরি হবে। সমন্বয়হীনতার কারণে প্রায়ই দেখি নগর উন্নয়নের নামে একই রাস্তা একটি বিভাগ খনন বা নির্মাণ করে যাচ্ছে এদের কাজ শেষ হওয়ার পরেই আর একটি বিভাগ এসে কাজ শুরু করছে। এভাবে সরকারের অর্থের অপচয় হচ্ছে।

শামীম হায়দার পাটোয়ারি বলেন, নির্বাচিত প্রতিনিধিরা যে কাজগুলো করবে সেই কাজগুলো এই কর্তৃপক্ষকে দিয়ে দেওয়া হয়েছে। আমাদের সংবিধানের ১১ অনুচ্ছেদে বলা আছে প্রশাসনের প্রতিটি পর্যায়ে নির্বাচিত প্রতিনিধি থাকবে এবং জনগণের অংশগ্রহণ থাকবে। সেখানে সিটি করপোরেশন আছে, সেখানে নির্বাচিত জনপ্রতিনিধি আছে। এই আইনে ভূমি অধিগ্রহণের ক্ষমতা দেওয়া হচ্ছে আবার ভূমি বন্দোবস্তরও ক্ষমতা দেওয়া হচ্ছে। পরবর্তীতে দেখা যাবে এই কর্তৃপক্ষ একটি লিজিং কোম্পানি অথবা একটা ডেভেলপার কোম্পানির মতো হয়ে যাবে। জায়গা অধিগ্রহণ করবে আবার জনগণের কাছে জায়গাগুলো বিক্রি করবে।

বিএনপি দলীয় সংসদ সদস্য হারুনুর রশীদ বলেন, প্রতিনিয়ত জণকল্যাণের জন্য সংসদে বিভিন্ন বিল পাস হচ্ছে। কর্মগুলো যারা বাস্তবায়ন করবে তারা কি নিরাপদ? কিছুদিন পূর্বে উন্নয়ন কর্মকাণ্ডের সাথে জড়িত রাজশাহীতে গণপূর্তের একজন ইঞ্জিনিয়ার তার দফতরে মারাত্মকভাবে আক্রান্ত, হয়েছে রক্তাক্ত। নির্বাহী বিভাগের একজন অন্যতম কর্মকর্তা ঘোড়াঘাট উপজেলার ইউএনও এখনো আইসিইউতে আছে। সে মারাত্মকভাবে আক্রান্ত হয়েছে। এই কাজ বাস্তবায়নের পূর্বে তাদের নিরাপত্তা দরকার। গাজীপুর সিটি করপোরেশন রয়েছে আসলে দরকার সমন্বিত পরিকল্পনা। আলাদা আইন দরকার নাই।

রুমিন ফারহানা বলেন, সংবিধান স্থানীয় সরকারের হাতে প্রায় সকল ক্ষমতা দেওয়ার পক্ষে অবস্থান নিয়েছে। এটাই গণতন্ত্রের চেতনা। কারণ গণতন্ত্র চায় সকল পর্যায়ে নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিদের দিয়ে জনগণের সেবা নিশ্চিত করা হোক। অথচ রাষ্ট্রে যা করা হচ্ছে সেটা সম্পূর্ণ উল্টা। নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিদের ক্ষমতা সংকুচিত করে আমলা নির্ভর প্রতিষ্ঠান সংখ্যায় এবং ক্ষমতায় বাড়ছে। সিটি করপোরেশনগুলো সঠিক সেবা দিতে পারে না তার কারণ সব দেবার ক্ষমতা দূরেই থাকুক সিটি করপোরেশনের হাতে ক্ষমতা একেবারেই নূন্যতম। গাজীপুর উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের আদৌ কোনো প্রয়োজন নাই, প্রয়োজন নাই রাজউক বা অন্যান্য উন্নয়ন কর্তৃপক্ষেরও।