আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক পদে আলোচনায় যারা

প্রকাশিত: ৮:০২ পিএম, নভেম্বর ১৯, ২০১৯
  • শেয়ার করুন

আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় নেতৃত্বে ব্যাপক রদবদল আসছে। আগামী ২০ ও ২১ ডিসেম্বর দলটির ২১তম জাতীয় কাউন্সিলের মধ্য দিয়ে এ রদবদল আসবে। এর মধ্য দিয়ে বাদ পড়বেন অনেক ‘প্রভাবশালী ও হেভিওয়েট’ নেতা, যার সংখ্যা দলটির কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী সংসদের মোট সংখ্যার অর্ধেকেরও বেশি।

‘নতুন মুখ, নতুন নেতৃত্বের’ যে প্রত্যাশা আওয়ামী লীগের হাইকমান্ড করছে, এর প্রতিফলন ঘটবে এতে। এ লক্ষ্যে দলের নবীন-প্রবীণ নেতাদের আমলনামা বিশ্লেষণ চলছে। আওয়ামী লীগের নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের একাধিক সূত্রে জানা গেছে এসব তথ্য।

দলের ৮১ সদস্যবিশিষ্ট কার্যনির্বাহী সংসদে ব্যাপক রদবদলের আভাস পাওয়া গেলেও এখনও অদ্বিতীয় বর্তমান সভাপতি শেখ হাসিনা। তার কোনো বিকল্প নেই আওয়ামী লীগে। নেতাকর্মীদের মধ্যে আস্থা আর ভালোবাসার মূর্তপ্রতীক তিনি।

বারবার অবসরের ঘোষণা দিলেও নেতাকর্মীদের দাবির মুখে দীর্ঘ ৩৮ বছর ধরে দলের সভাপতির দায়িত্ব পালন করছেন বঙ্গবন্ধুর জ্যেষ্ঠ কন্যা। এবারও তিনিই দলের সভাপতি থাকছেন তা নিশ্চিত।

দলের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ পদ সাধারণ সম্পাদক। তিন বছর ধরে এ পদে দায়িত্ব পালন করছেন সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের। মাঝে বেশ কিছুদিন অসুস্থ থাকলেও এখন তিনি অনেকটাই স্বাভাবিক। আবারও তার এ পদে থাকার সম্ভাবনা রয়েছে।

তবে কাউন্সিল সামনে রেখে এ পদে আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য ড. আবদুর রাজ্জাক, প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক ড. হাছান মাহমুদ, সাংগঠনিক সম্পাদক খালিদ মাহমুদ চৌধুরীর নামও শোনা যাচ্ছে। যদিও প্রকাশ্যে মুখ খুলছেন না কেউ।

এ বিষয়ে ওবায়দুল কাদের বলেন, আমি দ্বিতীয়বার পার্টির সাধারণ সম্পাদক থাকব কি না, তা নেত্রীর (শেখ হাসিনা) সিদ্ধান্তের ওপর নির্ভর করছে। তিনি বলেন, আমি নিজে প্রার্থী হব না। নেত্রী চাইলে আবার দায়িত্ব দেবেন, না চাইলে অন্য কাউকে দায়িত্ব দেবেন।

আওয়ামী লীগের ১৭ সদস্যবিশিষ্ট সম্পাদকমণ্ডলীর মধ্যে বাদের তালিকায় আছেন কমপক্ষে ১০ জন। বাদ পড়াদের মধ্যে সাবেক ২ মন্ত্রীসহ ৬ জন উপদেষ্টা পরিষদে স্থান পেতে পারেন। প্রেসিডিয়াম থেকে কার্যনির্বাহী সংসদের সদস্য পদ পেতে পারেন ২ জন। উপদেষ্টা পরিষদ থেকে ২ জন প্রেসিডিয়ামে আসতে পারেন বলে জোর গুঞ্জন রয়েছে।

ক্যাসিনোকাণ্ড, দুর্নীতি ও নৌকা বিরোধিতার কারণে কপাল পুড়তে যাচ্ছে সম্পাদকমণ্ডলীর ৩৪ সদসের অনেকের। ইতিমধ্যে শীর্ষ কয়েক নেতা বাদ পড়ার বিষয়টি অবহিত হয়েছেন বলে শোনা যাচ্ছে। আওয়ামী লীগ সভাপতি বিভিন্ন আলোচনায় বিতর্কিতদের বাদ দেয়ার বিষয়টি স্পষ্ট করেছেন।

সম্পাদকমণ্ডলীর মধ্যে যুগ্ম সম্পাদক পদ ৪টি। এর মধ্যে জাহাঙ্গীর কবীর নানক ও আবদুর রহমান সংসদ নির্বাচন থেকে বাদ পড়েছেন। আসন্ন কাউন্সিলে যুগ্ম সম্পাদক দীপু মনি প্রেসিডিয়ামে যেতে পারেন। বাকি ৩ জনের দু’জন বাদ পড়ার ঝুঁকিতে আছেন। সৃষ্টি করা হতে পারে সহকারী যুগ্ম সম্পাদক পদ।

এছাড়া দলে নিষ্ক্রিয়তা, কমিটি বাণিজ্য, নিজ এলাকায় দলীয় কোন্দলসহ নানা কারণে ৮ সাংগঠনিক সম্পাদকের ৫ জনই বাদ পড়তে পারেন। পরিবর্তন আসতে পারে স্বাস্থ্য ও জনসংখ্যাবিষয়ক সম্পাদক, যুব ও ক্রীড়াবিষয়ক সম্পাদক, বাণিজ্য ও শিল্প সম্পাদক, শিক্ষা ও মানবসম্পদ সম্পাদক, মহিলাবিষয়ক সম্পাদক, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিবিষয়ক সম্পাদক, তথ্য ও গবেষণা সম্পাদক এবং শ্রম ও জনশক্তিবিষয়ক সম্পাদক পদে।

কোষাধ্যক্ষ পদেও পরিবর্তনের সম্ভাবনা বেশি। সেক্ষেত্রে বর্তমান কোষাধ্যক্ষ এইচএন আশিকুর রহমান কার্যনির্বাহী সদস্য কিংবা সম্পাদকমণ্ডলীর কোনো পদ পেতে পারেন।

আওয়ামী লীগের কার্যনির্বাহী সংসদের সদস্য সংখ্যা ২৮। কাউন্সিলের মাধ্যমে গুরুত্বপূর্ণ পদে যাদের স্থান দেয়া সম্ভব হয় না তারা সদস্য পদ পেয়ে থাকেন। বর্তমান সদস্যদের অনেকেই নিজ পদ ব্যবহার করে প্রভাব বিস্তার করা, মন্ত্রণালয়ে গিয়ে দলীয় প্রভাব খাটানোসহ বিভিন্ন অভিযোগের কারণে বাদ পড়ার ঝুঁকিতে রয়েছেন।

সেক্ষেত্রে বিগত কয়েক কমিটি থেকে বাদ পড়া ত্যাগী ও প্রভাবশালী নেতা, দুর্দিনে দলের পাশে থাকা সাবেক ছাত্রলীগ নেতা, বঙ্গবন্ধুর সঙ্গে রাজনীতি করা পরিবারের সদস্য, মুক্তিযুদ্ধে বিশেষ অবদান রাখা মুক্তিযোদ্ধা কিংবা তাদের পরিবারের সদস্যরা স্থান পাবেন নতুন কমিটিতে। এছাড়া কার্যনির্বাহী সংসদের ২৮ সদস্যের মধ্যে ২ জন প্রেসিডিয়ামে স্থান পেতে পারেন বলে শোনা যাচ্ছে।