ইসরায়েলের মানচিত্র সৌদি-ভূমধ্যসাগর থেকে জর্ডান নদী পর্যন্ত নিতে মরিয়া নেতানিয়াহু, আতঙ্কে ৮ দেশ

প্রকাশিত: ৬:৪৮ পিএম, অক্টোবর ১৪, ২০২৪
  • শেয়ার করুন

এবার ইসরায়েলের মন্ত্রী বেজালেল স্মোট্রিচ এই সপ্তাহের শুরুর দিকে গণমাধ্যমে আয়োজিত টকশোতে দখলদার রাষ্ট্রটির সীমানা ইউফ্রেটিস থেকে দামেস্ক পর্যন্ত বাড়ানোর পরিকল্পনার পক্ষে বেপরোয়াভাবে যুক্তি তুলে ধরেন। এতে মধ্যপ্রাচ্যসহ গোটা বিশ্বে ব্যাপক প্রতিক্রিয়া এবং সমালোচনার ঝড় উঠে।

এদিকে বর্ণবাদী এবং ফ্যাসিবাদী ভাষণ দেয়ার জন্য সমালোচিত স্মোট্রিচ সম্প্রতি মুক্তিপ্রাপ্ত প্রামাণ্যচিত্র ‘ইন ইসরায়েল: মিনিস্টারস অফ কেয়াস’ এর উদ্বোধন অনুষ্ঠানে এমন মন্তব্য করেন। তিনি দাবি করেন, জায়োনিস্ট মতবাদ অনুযায়ী, ভূমধ্যসাগর থেকে জর্ডান নদীর ওপার পর্যন্ত বিস্তৃত ‘বৃহত্তর ইসরায়েল’ এর যে সীমান্ত রয়েছে তা ধীরে ধীরে তেল আবিবের অন্তর্ভুক্ত করা হবে এবং এ প্রক্রিয়া শুরু হয়ে গেছে। ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুর ঘনিষ্ঠ সহযোগী এবং বিশ্বাসজন স্মোট্রিচ বলেন, ‘অবশ্যই মধ্যপ্রাচ্যের নতুন মানচিত্র করা হবে। তবে তা ধীরে বাস্তবায়িত হবে।’

ভূমধ্যসাগর থেকে জর্ডান নদী পর্যন্ত ইসরায়েলের ‘সীমানা’ বাড়ানোর বিষয়ে জিজ্ঞাসা করা হলে, তিনি এই কথা বলেন। ‘আমাদের মহান ধর্মগুরু এবং ঋষিরা বলতেন, জেরুজালেমের ভবিষ্যৎ সীমারেখা দামেস্ক পর্যন্ত বিস্তৃত হবে। সংবাদমাধ্যম প্রেসটিভি ইরানে প্রকাশিত আলিরেজা আকবারির নিবন্ধে এমনটি উঠে এসেছে।

এদিকে স্মোট্রিচের এই মন্তব্য আসে গাজা এবং লেবাননের ওপর ইসরায়েলের গণহত্যামূলক যুদ্ধের মধ্যে। ইতোমধ্যে লেবাননের ওপর বর্বরোচিত হামলায় এখন পর্যন্ত দুই হাজারের এরও বেশি মানুষ নিহত হয়েছে এবং অন্তত ১০ লাখ মানুষ বাস্তুচ্যুত হয়েছে। আর গাজায় এক বছর ধরে চলা হামলায় এখন পর্যন্ত ৪২ হাজারের বেশি মানুষ নিহত হয়েছে এবং গাজা উপত্যকায় ১৫ লাখেরও বেশি ফিলিস্তিনি বাস্তুচ্যুত হয়েছে।

এদিকে গত বছরের ৭ অক্টোবর স্মরণ করিয়ে দেয় যখন ইসরায়েলি সেনারা গাজায় অবস্থানরত প্রতিরোধ আন্দোলন হামাসের বিরুদ্ধে ‘সামরিক লক্ষ্য’ তাড়া করার অঙ্গীকার করেছিলেন। এর পর প্রতিবেশী দেশ লেবাননের দক্ষিণ বৈরুতে হিজবুল্লাহর সদর দপ্তরের ওপর বিমান হামলার আড়ালে দক্ষিণ লেবাননের ওপর হামলার যৌক্তিকতা আদায়ে ঘৃণ্য প্রচেষ্টা চালায়। এর পরই এটা স্পষ্ট হয় যে, তেলআবিব তথাকথিত ‘বৃহত্তর ইসরায়েল’ কৌশল বাস্তবায়ন করছে।

‘বৃহত্তর ইসরায়েল’ বা গ্রেটার ইসরায়েল হচ্ছে ইহুদিবাদীদের একটি সম্প্রসারণবাদী এবং আঞ্চলিক পূর্ণাঙ্গতার ধারণা, যা পশ্চিম এশিয়া এবং উত্তর আফ্রিকা জুড়ে জায়োনিস্ট বা ইহুদিবাদী রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার একটি মহাকারসাজি। এই পরিকল্পনাটি জায়োনিজমের মতোই পুরোনো এবং এর প্রতিষ্ঠাতা থিওডর হার্টজল ১৯ শতকের শেষ দিকে এটিকে উপস্থাপন করেছিলেন। বর্তমান সময়েও অনেক ইসরায়েলি রাজনীতিবিদ এই ধরনের ধারণার সমর্থক এবং বাহক।

ভূখণ্ডগত বিতর্কিত এই ধারণায় বলা হয়, এটি বর্তমান জায়োনিস্ট রাষ্ট্রকে দখলকৃত ফিলিস্তিনি ভূখণ্ড ও সিরীয় ভূখণ্ডগুলোকে অন্তর্ভুক্ত করে। বিশেষ করে দখলকৃত পশ্চিম তীর, গাজা এবং গোলান মালভূমি। আর সবচেয়ে ব্যাপক ধারণায়, এটি নীল নদ থেকে ইউফ্রেটিস নদী পর্যন্ত বিস্তৃত, অর্থাৎ মিশর, জর্ডান, লেবানন, তুরস্ক, সিরিয়া, ইরাক, কুয়েত এবং সৌদি আরবের উল্লেখযোগ্য ভূখণ্ডকে অন্তর্ভুক্ত করে।

ইসরায়েলের আঞ্চলিক উচ্চাভিলাষ: এখানে বিশ্লেষণ করা হবে যে ইসরায়েলের শাসকগোষ্ঠীর ‘বৃহত্তর ইসরায়েল’ এই ধারণাটি কেবল একটি কাল্পনিক, নাকি এটি সত্যিই সামরিক আগ্রাসনের মাধ্যমে জমি দখল করার পরিকল্পনা। বিশেষ করে ইরানের ওপর ইসরায়েলি আক্রমণের দামাডোলকে কাছে লাগিয়ে এই দখল নীতি বাস্তবায়ন করতে পারে তেলআবিব। তথাকথিত ‘গ্রেটার ইসরায়েল’ মতবাদের প্রথম উল্লেখগুলো পাওয়া যায় হিব্রু বাইবেল থেকে। এই ধারণাটি পরে ফ্যাসিস্ট মতাদর্শ জায়োনিজমের প্রধান প্রবক্তা থিওডর হার্টজলের মাধ্যমে প্রতিধ্বনিত হয়েছিল।

এদিকে থিওডর হার্টজলের দ্য কমপ্লিট ডায়েরিজ অফ থিওডর হার্টজল, দ্বিতীয় খণ্ডে তিনি বলেন, বাইবেলে উল্লেখিত  ‘মিশরের নদী থেকে ইউফ্রেটিস পর্যন্ত’ গোটা ভূখণ্ডটি তিনি জায়োনিস্ট রাষ্ট্রের ভবিষ্যৎ ‘সীমানা’ হিসেবে কল্পনা করেন। হার্টজলের ডায়েরিটি রাফায়েল পাতাই সংকলন করেন এবং তা ১৯৬০ সালে প্রকাশিত হয়। এটি মূলত তথাকথিত ‘প্যালেস্টাইনে ইহুদিদের জন্য একটি আবাসভূমি গড়াকে কেন্দ্র করে করা হয়, যা স্থানীয় ফিলিস্তিনি বাসিন্দাদের জীবনের বিনিময়ে গড়ে উঠবে।