আ’লীগের উপ-কমিটিতে অনুপ্রবেশ ঠেকাতে যাচাই-বাছাই চলছে

প্রকাশিত: ১১:৩৫ এএম, অক্টোবর ১২, ২০২০
  • শেয়ার করুন

আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় উপ-কমিটিতে অনুপ্রবেশ ঠেকাতে নতুন কমিটি ঘোষণার আগে ব্যাপক যাচাই-বাছাই চলছে। কমিটিতে যাদের নাম দেওয়া হয়েছে বিভিন্ন দিক থেকে তাদের ব্যাপারে খোঁজ-খবর নিচ্ছেন দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতারা।

গত বছর ডিসেম্বরে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় সম্মেলনের পর প্রায় ১১ মাস অতিবাহিত হলেও নতুন কেন্দ্রীয় উপ-কমিটি গঠন হয়নি। তবে দ্রুত এই কমিটি গঠন করে জমা দিতে সম্পাদকীয় বিভাগগুলোর সম্পাদকদের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।

আওয়ামী লীগের নেতাদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, অধিকাংশ সম্পাদকীয় বিভাগের কমিটি জমা দেওয়া হয়েছে। জমা হওয়া কমিটিগুলো যাচাই-বাছাই করা হচ্ছে। যাদের নামে অভিযোগ এসেছে তাদের বিষয়ে বিভিন্নভাবে তদন্ত করা হচ্ছে। গত ৩ অক্টোবর আওয়ামী লীগের কার্যনির্বাহী সংসদের সভায় কেন্দ্রীয় নেতাদের নিয়ে ৮টি কমিটি গঠন করা হয়েছে। কমিটিগুলো উপ-কমিটির যাচাই-বাছাইয়ের কাজ করছে। এরপর দলের সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা চূড়ান্ত পর্যায়ে যাচাই-বাছাই করে কমিটি ঘোষণা করবেন।

আওয়ামী লীগের নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের নেতারা জানান, দলের কোনো কোনো নেতাকর্মীর বিভিন্ন অপকর্ম ও অনিয়মের কারণে সম্প্রতি দল ও সরকারকে সমালোচনা ও বিব্রতকর পরিস্থিতিতে পড়তে হয়েছে। যারা এ ধরনের কর্মকাণ্ডের সঙ্গে লিপ্ত তারা দলের মধ্যে অনুপ্রবেশকারী বলে ওই নেতারা জানান।

নেতারা আরও জানান, ভবিষ্যতে যাতে অনুপ্রবেশকারী ও বিতর্কিতদের কারণে সমালোচনা তৈরি না হয় সে জন্য এখন থেকেই সতর্ক অবস্থান নেওয়া হয়েছে। অনুপ্রবেশকারী ও বিতর্কিতদের ঠেকাতে কেন্দ্রীয় উপ-কমিটিসহ অন্যান্য কমিটি দেওয়ার আগে ব্যাপক যাচাই-বাছাই করা হচ্ছে।

সম্প্রতি দুর্নীতি ও অনিয়মসহ বিভিন্ন অপকর্মের ঘটনায় আওয়ামী লীগ ও দলটির সহযোগী সংগঠনের বিভিন্ন পর্যায়ের নেতাকর্মীর জড়িত থাকার অভিযোগ ওঠে। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি হৈ চৈ ও সমালোচনা হয় আওয়ামী লীগ নেতা দাবিদার মো. সাহেদকে নিয়ে। করোনা মহামারির মধ্যে দুর্নীতি ও অনিয়মের সঙ্গে যুক্ত থাকার তথ্য বেরিয়ে আসে আওয়ামী লীগের আন্তর্জাতিক বিষয়ক কেন্দ্রীয় উপ-কমিটির সহ-সম্পাদক দাবিদার রিজেন্ট গ্রুপের চেয়ারম্যান সাহেদের বিরুদ্ধে। যদিও আওয়ামী লীগ থেকে বলা হয় সাহেদ দলের কেউ নন। আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী তাকে গ্রেফতার করে।

এরপর নকল মাস্ক সরবরাহের ঘটনায় আওয়ামী লীগের মহিলা বিষয়ক উপ-কমিটির সাবেক সহ-সম্পাদক ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সহকারী রেজিস্ট্রার শারমিন জাহান গ্রেফতার হন।

এদের অপকর্মের ঘটনায় দল ও সরকারকে সমালোচনার মুখে পড়তে হয়। দলের সঙ্গে বিভিন্নভাবে সংশ্লিষ্ট এই সব নেতাকর্মীকে আওয়ামী লীগ বলছে অনুপ্রবেশকারী এবং এদের কারণে দল ও সরকারকে বার বার সমালোচনার মধ্যে পড়তে হচ্ছে। এই পরিস্থিতিতে অনুপ্রবেশকারী ঠেকাতে সর্বাধিক গুরুত্ব দিচ্ছে আওয়ামী লীগ।

এছাড়া উপ-কমিটির সহ-সম্পাদক নিয়ে গত কয়েক বছর ধরে দলের ভেতরে বাইরে সমালোচনা ওঠে। সহ-সম্পাদক পদের নাম ভাঙিয়ে অপকর্মের সঙ্গে অনেকেই জড়িয়ে পড়েন। সম্পাদকীয় বিভাগে কত জন করে সহ-সম্পাদক করা হয়েছিল তার কোনো হিসাব ছিল না। একেকটি সম্পাদকীয় বিভাগে শতাধিক সহ-সম্পাদক ছিলেন। কোনো যাচাই-বাছাই না করে ঢালাওভাবে সহ-সম্পাদক করায় অনেক সুযোগসন্ধানী ও দুষ্কৃতিকারী দলে ঢুকে পড়েন। এর ফলে অপকর্মকারীরা আরও সুযোগ নিতে থাকেন।

এসব বিষয় উপলব্ধি করে গত বছর অনুষ্ঠিত আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কাউন্সিলে গঠনতন্ত্র সংশোধন করে সহ-সম্পাদক পদ বাদ দেওয়া হয়। তবে উপ-কমিটি গঠনের বিধান রাখা হয়েছে। এই উপ-কমিটিতে যারা থাকবেন তাদের মধ্যে চেয়ারম্যান ও সদস্য সচিব ছাড়া প্রত্যেকে কমিটির সদস্য হবেন। তবে কত সদস্যের কমিটি হবে সেটা নির্দিষ্ট করে দেওয়া হয়নি। পরবর্তীতে আওয়ামী লীগের কার্যনির্বাহী সংসদের সভায় প্রত্যেক সম্পাদকীয় বিভাগে ৩৫ জন করে সদস্য নির্দিষ্ট করে দেওয়া হয়েছে।

আওয়ামী লীগের মৃক্তিযুদ্ধ বিষয়ক সম্পাদক মৃণাল কান্তি দাশ বলেন, উপ-কমিটি গঠনের কাজ চলছে। তাড়াতাড়িই আলোর মুখ দেখবে। কোনো সাহেদ, পাপিয়াদের কমিটিতে স্থান হবে না। সাহেদ-পাপিয়ারা যাতে কমিটিতে আসতে না পারে সে জন্য সতর্কভাবে সদস্য নেওয়া হচ্ছে। অনুপ্রবেশ ঠেকাতে কঠোরভাবে যাচাই-বাছাই করা হচ্ছে।

আওয়ামী লীগের দপ্তর সম্পাদক ব্যারিস্টার বিপ্লব বড়ুয়া বলেন, দ্রুতই উপ-কমিটি জমা দিতে বলা হয়েছে। অধিকাংশই জমা দিয়েছে। যেগুলো এখনও জমা হয়নি সেগুলোর কাজ চলছে। কমিটিতে যাদের নাম দেওয়া হয়েছে তাদের যাচাই-বাছাই করে কমিটি ঘোষণা দেওয়া হবে।